• শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফর ২০২১
  • " />

     

    হাসারাঙ্গা-শঙ্কা কাটিয়ে মুশফিক-মিরাজে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ

    হাসারাঙ্গা-শঙ্কা কাটিয়ে মুশফিক-মিরাজে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ    

    ১ম ওয়ানডে, মিরপুর (টস- বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ ২৫৭/৬, ৫০ ওভার (মুশফিক ৮৪, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, তামিম ৫২, আফিফ ২৭*, ডি সিলভা ৩/৪৫, গুনাথিলাকা ১/৫, চামিরা ১/৩৯, সান্দাকান ১/৫৫) 
    শ্রীলঙ্কা ২২৪ অল-আউট, ৪৮.১ ওভার (হাসারাঙ্গা ৭৪, পেরেরা ৩০, মিরাজ ৪/৩০, মোস্তাফিজ ৩/৩৪,  সাইফউদ্দিন ২/৪৯) 
    বাংলাদেশ ৩৩ রানে জয়ী 


    মুশফিকুর রহিমের ৮৪ রানের সঙ্গে তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহর দুই ফিফটির পর মেহেদি হাসান মিরাজের ৪ উইকেটে প্রথম ওয়ানডেতে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা ইনিংসের প্রায় মাঝপথের পর থেকে একটা লম্বা সময় বাংলাদেশের হুমকি হয়ে ছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ২৫৮ রানতাড়ায় অন্যরা যেখানে মিরাজদের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন, তিনি সেখানে খেলেছেন ৬০ বলে ৭৪ রানের ইনিংস। তবে তিনি ছাড়া শ্রীলঙ্কা ইনিংসে আর কেউ পার হতে পারেননি ৩০ রানও, শ্রীলঙ্কাকেও পার করা হয়নি তার।  

    বোলিং ওপেনিংয়ে একদিকে মিরাজের সঙ্গে তাসকিন আহমেদকে এনেছিলেন তামিম ইকবাল। মিরাজ আঁটাসাঁট থাকলেও তাসকিন পুরো ইনিংসেই লাইন-লেংথ ঠিক করে উঠতে পারেননি, শুরুতে হয় বেশি ফুললেংথে গেছেন, নাহলে করেছেন শর্ট। দানুশকা গুনাথিলাকা তাকে মেরেছিলেন টানা তিন চার। প্রথম ব্রেকথ্রু দিয়েছেন মিরাজই, তার ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে গুনাথিলাকার ১৯ বলে ২১ রানের ক্যামিও। নিজের প্রথম ওভারে এরপর সফল হয়েছেন মোস্তাফিজ, তাকে টেনে মারতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন পাথুম নিসাঙ্কা। সাকিব সাফল্য পেয়েছেন নিজের দ্বিতীয় ওভারে, তার অফস্টাম্পের বাইরের ডেলিভারির পিচিংয়ে ঠিকঠাক যেতে না পারে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের ভাল ক্যাচে পরিণত হয়েছেন কুসাল মেন্ডিস, ৩৬ বলে ২৪ রান করে। 



    এরপরের তিন উইকেটই নিয়েছেন মিরাজ- জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন প্রথমে কুসাল পেরেরা, এদিন শ্রীলঙ্কা অধিনায়কের বিপক্ষে এর আগে দুটি ব্যর্থ রিভিউ করেছিল বাংলাদেশ। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা অফস্টাম্পের দিকে বেশি সরে গিয়েছিলেন, বল তার থাইপ্যাড ছুঁয়ে ভেঙেছে স্টাম্প, আর আশেন বান্দারা স্টাম্প হারিয়েছেন ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে গিয়ে হোয়্যাক করতে গিয়ে। হাসারাঙ্গা এসেছেন এরপরই, মিরাজের শেষ ওভারে একটি ছয়ও মেরেছিলেন। সেটি সহ এদিন ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়েছেন মিরাজ, নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ৫০তম উইকেটও। হাসারাঙ্গার লড়াই শুরু হয়েছে এরপরই, শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন তাসকিনকে দুই ছয় মেরে, মাত্র ৩১ বলে। ৭ম ও ৮ম উইকেটে যথাক্রমে দাসুন শনাকা ও ইসুরু উদানাকে নিয়ে ৪০ বলে ৪৭ ও ৫৯ বলে ৬২ রানের জুটি গড়েছিলেন, ৬৩ রানে একটা জীবনও পেয়েছিলেন। তবে শেষটা করতে পারেননি, সাইফউদ্দিনকে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন আফিফের হাতে। বাংলাদেশের জয় তখন থেকেই হয়ে দাঁড়িয়েছে সময়ের অপেক্ষা। ৩৯তম ওভারে চোট পেয়ে উঠে যাওয়া মোস্তাফিজ ফিরেছেন, শেষ ২ উইকেটও নিয়েছেন তিনিই। ফলে বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট হয়েছে সে স্কোর, যেটি ছিল প্রথম ইনিংসের পর একটু আক্ষেপেরই। 

    তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ- তিনজন ফিফটি পেলেও যে শেষটা করে আসা হয়নি কারও। পরের দুজনের সেঞ্চুরি জুটিতে শক্ত একটা ভিত পেয়েছিল বাংলাদেশ, তবে তার ওপর দাঁড়িয়েও অসময়ে উইকেট হারিয়ে শেষ ১০ ওভারে তারা তুলতে পারেনি ৬৪ রানের বেশি। 

    এ ম্যাচকে ঘিরে প্রথমে ছিল কোভিড-১৯-এর শঙ্কা, শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে শুরু ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। লিটন দাস ফিরেছিলেন আগেভাগেই। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ব্যবধানে দুই সেঞ্চুরি পাওয়া লিটনের খরা চলছেই ওয়ানডেতে, এ ফরম্যাটে শেষ ৭ ইনিংসে তার সর্বোচ্চ রান ২১। এদিন দুশমন্থ চামিরাকে শরীর থেকে দূরে দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে বড়সড় এজড হয়ে ধরা পড়েছেন স্লিপে। ফেরার ম্যাচে নেমেই ড্রাইভ করে চার মেরেছিলেন সাকিব, পরে ফ্লিক করে মেরেছেন আরেকটি। তবে এরপরই উদানা-চামিরার অফস্টাম্পের বাইরের ভাল চ্যানেলের বোলিংয়ে থমকে যেতে হয়েছে তাকে। শেষ পর্যন্ত দানুশকা গুনাথিলাকাকে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেছেন ৩৪ বলে ১৫। 

    তামিম-মুশফিকের ফিফটি জুটির পেস ছিল ভালই, ইনিংসের ৩ ছয়ের দুটিই হয়েছে এ সময়ই। তামিম তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫১তম ফিফটি পেয়েছেন, ৬৬ বলে পূর্ণ করেছেন সেটি। তবে খেই হারিয়ে ফেলেছেন এরপরই। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে বোকা বানাতে গিয়ে নিজেই বোকা বনেছেন, শুরুতে লেগস্টাম্পের বাইরে সরে গিয়ে আবার ফিরে এসে মিস করেছেন ফুললেংথের বলটা, রিভিউ নিয়েও বদলাতে পারেননি আম্পায়ার মাসুদুর রহমানের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তটা। ঠিক পরের বলে প্যাডল সুইপ করতে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন, খেসারত দিয়ে হয়েছে তাকেও। দুই বলে দুই উইকেটের সঙ্গে দুটি রিভিউও বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে তখনই। 

    তবে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর জুটি বাংলাদেশকে টানছিল ভালভাবেই। মুশফিক মূল ভূমিকাটা পালন করেছেন, গ্যাপ বের করা বা স্ট্রাইক বদলে তিনি ছিলেন দারুণ। ৫২ বলেই ফিফটি পেয়ে গেছেন মুশফিক, ডি সিলভাকে দারুণ এক ইনসাইড-আউটে চার মেরে। সেঞ্চুরির দিকেই এগুচ্ছিলেন, তবে রিভার্স-সুইপ কাল হয়েছে তার। ৮৭ বলে ৮৪ করে থামতে হয়েছে তাকে, সান্দাকানের বলে ক্যাচ দিয়ে। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটি ছিল ১০৯ রানের। দ্বিতীয় পাওয়ারপ্লেতে সাকিবের পর তামিম-মিঠুনকে হারালেও এ জুটিতে ভর করে বাংলাদেশ তুলেছিল ১৫৩ রান। তবে মুশফিকের উইকেটের আগে থেকেই একটু খেই হারানো শুরু করেছিল তারা তৃতীয় পাওয়ারপ্লেতে। ফিফটির পরপরই ৭৬ বলে ৫৪ করে ফিরতে হয়েছে মাহমুদউল্লাহকেও,  ডি সিলভার তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়েছেন তিনি টেনে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে। এরপর আফিফ হোসেন অপরাজিত থেকেছেন ২২ বলে ২৭ রানে, সাইফউদ্দিন ৯ বলে ১৩ রানে। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের ইনিংসে ছিল না একটিও ছয়।