• " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েডঃ মিরপুরে নতুন ইতিহাস

    ২২ গজের সেলুলয়েডঃ  মিরপুরে নতুন ইতিহাস    

     

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। মিরপুরে কাল ফিরে এলো নর্দাম্পটনের সেই ছবিটা। অনেক ছবির ওপর ভর করে।

     

    অতঃপর...

    ১৬ বছর। আজ যারা তরুণ, তাদের অনেকেই নর্দাম্পটনের জয় দেখেছেন। অনেকের স্মৃতিতেই হয়তো ভাস্বর ছিল। ঝাপসাও হয়ে আসছিল অনেকেরই। কাল মিরপুরে নতুন ইতিহাস হলো। টেস্ট-যুগে প্রবেশ করার পর পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

    ১৬ বছরের তুলনায় ২ বছর খুব বেশী সময় নয়। তবে তামিম ইকবালের জন্য অপেক্ষাটা কেবলই বাড়ছিল। বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে খুব কাছাকাছি গেলেন (৯৫), সেঞ্চুরির দেখা পেলেন না। অবশেষে সেই গেরোটাও খুললো। ২৩ মার্চ ২০১৩ এর পর আবার ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেলেন তামিম ইকবাল, শুধু ব্যাট নয়, উদযাপনেও সমালোচনার জবাব দিলেন!

     

     

    মিরপুরের উইকেট সবুজাভ!

    অনেক ক্রিকেটারই নিজের বিস্ময়টা লুকিয়ে রাখতে পারেননা মিরপুরের উইকেট দেখে। ঘাসওয়ালা উইকেট আছে, কংক্রিটের মতো শক্ত উইকেট আছে, তবে মিরপুরের ওই কালচে উইকেট ছিল প্রায় ‘অনন্য’। কাল সেখানেই যেন ঘাসের ছোঁয়া মিললো। এসময় কুয়াশার বাগড়া নেই, গামিনি ডি সিলভা সে কারণেই হয়তো রেখেছিলেন হালকা ঘাসের প্রলেপ। তবে সেই ঘাসও দমাতে পারেনি সাকিবকে, টস জিতে ঠিকই ব্যাটিং নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

     

     

    আক্কেল সেলামি...

    ক্রিকেটের বহুল প্রচলিত প্রবাদ ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’- এর যথার্থতা পাকিস্তান কাল টের পেল আবার। তামিম তখন ৪৭-এ দাঁড়িয়ে। সাদ নাসিমের নির্বিষ ফুলটসকে আরও নির্বিষভাবে তাঁর দিকেই ঠেলে দিলেন তামিম। নাসিম যেন হতভম্ব, এই বলেও ক্যাচ আসতে পারে, ভাবতেই পারেননি! হাতছাড়া করলেন সুযোগ, পাকিস্তানকে সেলামি গুনতে হলো ৮৫ রান!

    আর জুনাইদ যখন মুশফিকের ক্যাচ ফেললেন, তখন তাঁর ২৮ বলে ৩৫ রান (স্ট্রাইক রেট ১২৫)। আজহার আলিকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আকাশে তুললেন বল, জুনাইদ ধরলেন, আবার ছাড়লেন। শেষ পর্যন্ত মুশফিক করলেন ৭৭ বলে ১০৬। মানে পাকিস্তানের ‘দন্ড’ এবার ৪৯ বলে ৭১ (স্ট্রাইক রেট ১৪৪.৮৯)।

     

     

    পঞ্চম বোলার...

    দুদলই পঞ্চম বোলারের দশ ওভারের কোটা পূর্ণ করেছে তিনজনকে দিয়ে। পাকিস্তানের সাদ নাসিম, আজহার আলী আর হারিস সোহেল মিলে দিয়েছেন ৭৯ রান (৭.৯)। উইকেট মেলেনি কারও। বাংলাদেশের এই কোটা পূর্ন করেছেন নাসির হোসেন, আবুল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ। দিয়েছেন পাকিস্তানি বোলারদের থেকে দশ রান কম (৬৯), উইকেট মেলেনি তাঁদেরও!

    মোহাম্মদ হাফিয কাল অর্ধেক খেলেছেন, বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষার ফল পাননি বলে বল হাতে নিতে পারছেন না এখনও। তাঁর বোলিংয়ের অভাবটা ভালই টের পেয়েছে পাকিস্তান। আর বাংলাদেশ আবুল হাসানকে মূল পেসার হিসেবে খেলালেও ব্যবহার করতে পারেনি ঠিকমত। আবুল সেই সুযোগ দিলেন কই!

     

     

    উইকেট কতদূর, আবুল হাসান!

    আবুল হাসানের বোলিং গড় কত? তাঁর বোলিং গড় নেই। অথবা অসীম। কাল মিরপুরে নিজের ষষ্ঠ ম্যাচ খেলে ফেললেন এই পেসার, তবে উইকেটের দেখা পাননি এখনও! গত বছরের নভেম্বরের জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ফিরেছিলেন চোট কাটিয়ে। এই ম্যাচে দিলেন ৫ ওভারে ৪২ রান। যথারীতি উইকেটশূন্য। পরের ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরবেন মাশরাফি, তাঁকে জায়গা করে দেবেন হয়তো আবুলই। মানে ওয়ানডে উইকেটের অপেক্ষাও বাড়বে আরেকটু।

    বেচারা, আবুল হাসান!

     

     

    এগিয়ে থেকেও পিছিয়ে পাকিস্তান

    কাল মিরপুরে বাংলাদেশের ইনিংসকে আপনি চাইলেই দুটি ইনিংসে ভাগ করতে পারেন। মুশফিক নামার আগে ও পরে। চাইলে ভাগ করতে পারেন অর্ধেক অর্ধেক করেও (২৫ ওভার)। সেখানে আলাদা আলাদা করে এগিয়ে পাকিস্তান, তবে উর্ধ্বমুখী গ্রাফে এগিয়ে বাংলাদেশ। ২৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান রেট প্রথম ৪ পেরিয়েছে (৪.১৬), সেখানে পাকিস্তানের রানরেট ছিল ৫.৩৬! ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশের এই রান রেট বেড়ে হয়েছিল ৬.৫৮। পাকিস্তানের ইনিংস শেষেও রান রেট আটকে ছিল ৫.৫১-এই।

     

     

    ‘গুড’ তামিম, ‘গুড’ মুশফিক

    দুজনই কাল ক্রিজের ‘ডেপথ’ ব্যবহার করেছেন খুব ভালভাবে। তামিম গুডলেংথের বল খেলেছেন ৭৪ টি, রান করেছেন ৮১। মুশফিক খেলেছেন ৫৭ বল, রান করেছেন ৭৮। মুশফিক আবার অফস্টাম্পের বাইরের গুড লেংথের বলেই ক্যাচ দিয়েছেন পরে। আর তামিম আউট হয়েছে শর্ট অফ আ লেংথের বলে।

     

     

    আজমলের আহাজারি!

    বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আগে ছিলেন ফর্মের চূড়ায়। সাঈদ আজমলের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলো, নিষিদ্ধ হলেন। শোধরালেন, ফিরে আসলেন। হাই-আর্ম অ্যাকশন বদলে হয়েছে কিছুটা সাইড-আর্ম অ্যাকশন। প্রথম ৫ ওভারে দিলেন মাত্র ১১ রান। অ্যাকশন বদলেও কি আগের আজমলই রয়ে গেলেন! ধারনা ভুল প্রমানিত হলো খানিক বাদেই। নিজের ষষ্ঠ ওভারে ১৪ রান দিলেন। বাকি ৪ ওভারে৪৯ রানদিয়ে শেষ পর্যন্ত আজমলের বোলিং ফিগার, ১০-০-৭৪-০! তাঁর সবচেয়ে বাজে ওয়ানডে বোলিং রেকর্ড এটি, এর আগে ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৭১ রান দিয়েছিলেন তিনি।

    নিজের ‘দ্বিতীয়’ অভিষেক নিশ্চয়ই ভুলে যেতে চাইবেন সাঈদ আজমল!

     

     

    জুটি নম্বর তিন

    বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি ছিল কাল তৃতীয় উইকেটে। তামিম-মুশফিক মিলে তুলেছিলেন ১৭৮ রান। যে কোনো উইকেটেই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি তা। গতকাল পাকিস্তানেরও সর্বোচ্চ জুটি ছিল তৃতীয় উইকেটেই। আজহার আলী ও হারিস সোহেল তুলেছিলেন ঠিক মুশফিক ও তামিমের অর্ধেক, ৮৯ রান। তিন নম্বর জায়গা নাকি দলের সেরা ব্যাটসম্যানের জন্য বরাদ্দ, কাল তিন নম্বর জুটি গড়ে দিল দুদলের পার্থক্য। তামিম ও মুশফিক ছিলেন অনেক এগিয়ে, মিরপুরেও বাংলাদেশকে তাড়া করতে গিয়ে শুধু পেছনেই পড়েছে পাকিস্তান।

     

     

    সাকিবের ওপরে তামিম

    বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওয়ানডে রানের রেকর্ডটা দুজন প্রায়ই হাতবদল করেন। কাল যেমন তামিম ইকবাল টপকে গেলেন সাকিব আল হাসানকে। ৪২৫৭ রান নিয়ে তামিম সবার ওপরে, সাকিবের রান ৪২০৪। সাকিবের সেঞ্চুরি ৬ টি, তামিমের ৫ টি। দুজনেরই অবশ্য সমান ২৮ টি করে ফিফটি।