• বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ ২০১৫
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : টি-টোয়েন্টিতেও একই ছবি!

    ২২ গজের সেলুলয়েড : টি-টোয়েন্টিতেও একই ছবি!    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!

    ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেও দাপুটে জয় পেল বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে এই ফরম্যাটে হারালো প্রথমবারের মতো। সে ম্যাচেরই কিছু ছবি-

     

     

    অভিষেক জোড়া জোড়া

    ম্যাচের প্রথম বলটি করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। স্ট্রাইকে ছিলেন মুখতার আহমেদ। বাংলাদেশ পেসার ও পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান, দুজনেরই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেক ছিল এই ম্যাচ! এই দুজন ছাড়াও আরও দুজনের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলো মিরপুরে। বাংলাদেশের সৌম্য সরকার ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান। বাংলাদেশের দুজনই বাঁহাতি (সৌম্য অবশ্য ডানহাতে বল করেন), পাকিস্তানের দুজনই ডানহাতি। সৌম্যের ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে আগেই, রিজওয়ানেরও তাই। মুস্তাফিজুর ও মুখতারের আন্তর্জাতিক অভিষেক এ ম্যাচ দিয়েই। মুস্তাফিজুর আবার এর আগে স্বীকৃত কোনো টি-টোয়েন্টিই খেলেননি!


     

    বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার

    প্রায়ই বলা হয়, বাংলাদেশ হলো বাঁহাতি স্পিনারের খনি। এ ম্যাচেও দুজন বাঁহাতি স্পিনার খেললেন। তবে বাঁহাতি পেসার বাংলাদেশে প্রায় বিরল এক প্রজাতি। মাত্র ছয়জন বাঁহাতি পেসার ওয়ানডেতে খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে। টেস্টে সংখ্যাটা আরও কম, চার। মুস্তাফিজুরের আগে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মাত্র দুজন। শেষ খেলেছিলেন সাজিদুল ইসলাম। ২০১৩ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে করেছিলেন এক ওভার। সেটিই আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের শেষ বাঁহাতি পেসারের প্রতিনিধিত্ব ছিল।

    মুস্তাফিজুর কি পারবেন, বাঁহাতি পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশকে ‘অভ্যস্ত’ করতে?

     

     

    দ্বিতীয় জীবনে প্রথম মরণ

    পাকিস্তান ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বল। মুখতার আহমেদ ডাউন দ্য উইকেটে এসে সাকিবকে মারতে চাইলেন। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলটি মিস করলেন। মিস করলেন মুশফিকও। দ্বিতীয় জীবন পেলেন মুখতার।

    ত্রয়োদশ ওভারের প্রথম বল। মুখতার লেগ স্টাম্পের বাইরে সরে গেলেন। সানিও অনুসরণ করলেন তাঁকে। ওয়াইড। পরের বলে আবার সরে গেলেন মুখতার, এবার সানির বলটি মিস করলেন। সরে গিয়ে ধরলেন মুশফিক, খানিক পরেই দেখলেন, বেসামাল মুখতার ক্রিজের বাইরে। এবার আর ভুল হলো না মুশির, মুখতারকে স্টামপড আউটই হতে হলো!

     

     

    তোমার হলো শুরু...

    ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের লড়াইটা দুজনের মধ্যে দারুণ। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে রানে সাকিবকে ক'দিন আগে টপকে গিয়েছিলেন তামিম। ‘লড়াইটা’ টি-টোয়েন্টিতেও আছে দুজনের। তবে তামিম পারলেন না এবার। ৮০৯ রান নিয়ে সাকিবের রানই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ, তামিমের রান ৭১৬।

    তামিম ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেই কমপক্ষে ফিফটি করেছেন, সাকিব দুবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে পারেননি একবারও। একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে তামিমের ফিফটি করা হলো না, করলেন সাকিব।

     

     

    আফ্রিদির ‘ক্রিকেট-জগত-বিচ্ছিন্নতা’

    গত এশিয়া কাপের ঘটনা। বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচে একসময় চোট পান শহীদ আফ্রিদি। আম্পায়ারের কাছে চেয়ে বসেন রানার! আম্পায়ার নাইজেল লংয়ের চোখেমুখে তখন বিস্ময়মাখানো হাসি। রানারের নিয়ম সেই কবেই বাতিল করেছে আইসিসি, আফ্রিদি তা জানতেনই না!

    বছরখানেক বাদে মিরপুরেই আফ্রিদি আবার একইরকম কান্ড করে বসলেন। মুস্তাফিজুরের বলে পেছনে ক্যাচ দেয়ার পর আম্পায়ারের কাছে জানতে চাইলেন, রিভিউ চাওয়া যাবে কিনা! অথচ টি-টোয়েন্টিতে ইউডিআরএস নেই। আফ্রিদি জানতেন না!

    রিপ্লেতে অবশ্য দেখা গেল, বল ব্যাটে লাগেনি। হতাশ আফ্রিদি রিভিউ চেয়েছিলেন সে কারণেই! এশিয়া কাপের ম্যাচে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিলেন। এবার দলের পরাজয়ে নেতৃত্ব দিলেন!

     

     

    শম্বুকগতির পাকিস্তান আর দাপুটে বাংলাদেশ

    আহমেদ শেহজাদকে ‘টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট’ হিসেবেই এনেছিল পাকিস্তান। সেই শেহজাদই কিনা খেললেন ৫৪.৮৩ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস! ওপেনিং জুটিতে তার শম্বুকগতির ব্যাটিংয়ের বোঝা পাকিস্তানকে বয়ে নিতে হয়েছে। রান রেট প্রথম ছয়ের কোটা পার হয়েছে দ্বাদশ ওভারে এসে! এক ওভারে সর্বোচ্চ রান উঠেছে ১৩, দুবার (৫ম ও ১৬তম)। আর বাংলাদেশ প্রথম ওভারেই সেই মাত্রা পেরিয়ে গেছে, তুলেছে ১৪ রান। ১১তম ওভারেও উঠেছিল ১৪। রান রেটও ছয়ের নীচে নামেনি কোন ওভার শেষেই।

     

     

    হায় পাকিস্তান!

    ৮৫, ৮৩, ৮১। সাঈদ আজমল, উমর গুল ও শহীদ আফ্রিদির আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির উইকেটসংখ্যা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানে আছেন তিনজনই। মিরপুরে সেই তিনজন মিলে নিলেন মাত্র একটি উইকেট! টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের ‘দাপট’ এর পেছনে তো এই তিনজনের অবদান অনেকখানি। তাঁদের দাপটের ছিটে-ফোঁটা দেখা গেল না এদিন। পাকিস্তানও হারলো বাংলাদেশের কাছে, প্রথমবারের মতো।

     

     

    উদযাপন

    ধুঁকতে থাকা আহমেদ শেহজাদ ক্যাচ তুলে দিলেন তাসকিন আহমেদের বলে। লং অফ থেকে ছুটে এসে ধরলেন অধিনায়ক মাশরাফি। তারপর তাসকিনের সঙ্গে সেই ‘ট্রেডমার্ক’ উদযাপন। লাফিয়ে উঠে বুকের সঙ্গে বুক মেলানো। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও ভারতের ম্যাচে করেছিলেন এমন। আজিঙ্কা রাহানের উইকেট উদযাপন করছিলেন, দ্বিতীয়বার বুকে বুক মেলাতে গিয়ে ভূপাতিত হয়েছিলেন দুজনই।

    শেহজাদের উইকেটে এবার পড়লেন শুধুই তাসকিন।

    তাসকিন পড়লেও গোটা ম্যাচে বাংলাদেশ ছিল মাথা উঁচু করেই। ওয়ানডের জয়ধারা ছুটেছে তাই টি-টোয়েন্টিতেও।

    গোটা বাংলাদেশও নিশ্চয়ই উদযাপন করেছে এ জয়!