• ফ্রেঞ্চ ওপেন
  • " />

     

    ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা পাঁচ পুরুষ খেলোয়াড়

    ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা পাঁচ পুরুষ খেলোয়াড়    

    লালমাটির দুর্গে চলতে থাকা জমজমাট লড়াইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্যাভিলিয়নের পাঠকদের জন্য উপহার “ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা পাঁচ”। এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে আজ থাকছে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা পাঁচ পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় এবং তাদের ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের গল্প।

     


     

    আরও পড়ুনঃ

     

    ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেরা পাঁচ নারী টেনিস খেলোয়াড়

     

    ফ্রেঞ্চ ওপেনের আদ্যোপান্ত

     


     

     

    ৫। গুস্তাভো ক্যুর্তেনঃ

     

    একশভাগ ক্লে কোর্ট স্পেশালিস্ট বলতে যা বোঝায়, ক্যুর্তেন ছিলেন তা-ই। ঝাড়া সোয়া ছয় ফুট দীর্ঘ দেহের সাথে শক্তিশালী ডানহাতি টপস্পিন আর ওয়ান-হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ড তাকে সাম্প্রাস-আগাসি রাজত্বের মধ্যে আলাদা করে দাঁড় করিয়েছিল মাটির কোর্টে। তবে ক্যুর্তেনের সব জারিজুরি ছিল এই মাটির কোর্টেই; ঘাস কিংবা হার্ড কোর্টে কোনদিন কোয়ার্টার ফাইনালের বাধাই পেরোতে পারেননি তিনি। তিনবারের ফ্রেঞ্চ ওপেন চ্যাম্পিয়নের রোলাঁ-গারোঁ সাফল্যের সময়কালও অনেক সমসাময়িক খেলোয়াড়ের চেয়ে ছোট- পাঁচ বছরের মধ্যেই এসেছিল তাঁর তিন শিরোপা- ১৯৯৭ সালে যার প্রথমটি জিতে নাম লিখিয়েছিলেন সবচেয়ে বাজে র‍্যাঙ্ক নিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের তালিকার দু’নম্বরে।

     

     

    ৪। ইভান লেন্ডলঃ

     

    সাবেক চেকোস্লোভাকিয়া থেকে উঠে আসা সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড় ধরা হয় ইভান লেন্ডলকে। বেজলাইন ধরে খেলা হেভি টপস্পিনের যে পাওয়ার টেনিস খেলে তারকা হয়েছেন আজকের নাদাল-জোকোভিচ-মারেরা, লেন্ডল ছিলেন সেই পাওয়ার টেনিসের পুরোধাদের একজন। দুর্দান্ত স্ট্যামিনা এবং অসাধারণ মনোবল তাকে টেনিসের সবচেয়ে ধারাবাহিক খেলোয়াড়ের তকমা দিয়েছিল। টানা এগারো বছর কোন না কোন গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল খেলা লেন্ডলের সাফল্যের তালিকায় আছে আটটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা- যার তিনটি ফ্রেঞ্চ ওপেনের। খেলা ছাড়ার পর কোচ হিসেবেও সাফল্য পেয়েছেন তিনি, অ্যান্ডি মারেকে জিতিয়েছেন দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম আর একটি অলিম্পিক সোনা।

     

     

    ৩। ম্যাটস উইল্যান্ডারঃ

     

    আশির দশক কাঁপানো উইল্যান্ডার সবসময়ই ঢাকা পড়ে ছিলেন তার সমসাময়িক ইভান লেন্ডলের ছায়ায়। উইল্যান্ডারের মেধা এবং ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না কখনই- মাত্র বিশ বছর বয়সেই ৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, সব ধরণের কোর্টে একাধিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা- এসবই তাঁর প্রতিভার সামান্য কিছু ঝলক। মাত্র আঠারো বছর বয়সে আনসীডেড খেলোয়াড় হিসেবে ফ্রেঞ্চ ওপেন জয় দিয়েই তাঁর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের মিশন শুরু হয়েছিল, যার শেষ হয়েছিল ট্রফিকেসে সাতটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ট্রফি উঠিয়ে। সবচেয়ে কম টুর্নামেন্ট খেলে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের তালিকার প্রথমেও আছেন তিনবারের ফ্রেঞ্চ ওপেনজয়ী এই সুইড মাস্টারের নাম।

     

     

    ২। বিয়ন বোর্গঃ

     

    সুইডেন কম কিছু দেয়নি টেনিসকে- সেই তালিকার সবচেয়ে বড় উপহার নিশ্চিতভাবেই বিয়ন বোর্গ। এগারো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা বোর্গের ক্যারিয়ার আজকের দিনের অনেক খেলোয়াড়ের চেয়েই ছোট, মাত্র দশ বছরের (পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে যদিও একবার ফিরেছিলেন অবসর ভেঙে)- কিন্তু সেই দশ বছরের ক্যারিয়ারেই তাঁর অর্জন যে কোন বিশ্বসেরা খেলোয়ড়ের ঈর্ষার কারণ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। টানা পাঁচটি উইম্বলডন, ছয়টি ফ্রেঞ্চ ওপেন, সাতাশটি গ্র্যান্ডস্ল্যামে অংশগ্রহণ করে তার এগারোটাতেই জেতা, তিন-তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামে কোন সেট না হেরেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া- বোর্গের অর্জনগুলো টেনিস রূপকথার অংশ।

     

    উইম্বলডনে দুর্দান্ত সফল বোর্গের সেরাটা অবশ্য দেখেছে রোলাঁ-গারোঁ; ৫১টি ম্যাচ খেলে যেখানে তিনি হেরেছেন মাত্র দুটিতে। বেজলাইনার হয়েও ঘাসের কোর্টে অবিশ্বাস্য সাফল্য পাওয়া বোর্গের ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতা সম্ভবত হার্ড কোর্টে কখনও কোন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে না পারা। মাত্র ছাব্বিশেই অবসর না নিলে এই অপূর্ণতাটাও থাকত কিনা- কে বলতে পারে! 

     

     

    ১। রাফায়েল নাদালঃ

     

    মাটির রাজা। রাফায়েল নাদালকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য এই দুটো শব্দই যথেষ্ট। টানা দশ বছরে একটি টুর্নামেন্টের ৬৭টি ম্যাচ খেলে একটা মাত্র পরাজয়- কিংবদন্তি হবার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে কি? রোলাঁ-গারোঁতে দশবার খেলতে এসে নয়বার শিরোপা নিয়ে ফিরেছেন- তাও এমন একটা যুগে, যখন প্রবল প্রতিপত্তির সাথে টেনিস বিশ্ব শাসন করছেন সর্বকালেরই অন্যতম সেরা রজার ফেদেরার। মজার ব্যাপার, ক্যারিয়ারের শুরুতে ফ্রেঞ্চ ওপেন খেলারই সুযোগ হচ্ছিল না নাদালের, রোলাঁ-গারোঁতে প্রথম খেলতে নামার আগেই খেলে ফেলেছিলেন দুটো করে ইউএস আর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর একটি উইম্বলডন। কিন্তু সেই যে ২০০৫-এ ঊনিশ বছর বয়সে ফ্রেঞ্চ ওপেন খেলা শুরু করলেন, এই আজকে পর্যন্ত তাঁকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মাত্র একবার- ২০০৯ সালে সারা বিশ্বকে যেবার চমকে দিয়েছিলেন রবিন সোদারলিং। 

     

     

    ভয়ংকর স্ট্যামিনা, কোর্টে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দাঁত কামড়ে পড়ে থাকার মানসিকতা, দুর্দান্ত শক্তিশালী টপস্পিন-নির্ভর ফোরহ্যান্ড আর বেজলাইনে চিতার ক্ষিপ্রতা নাদালকে দিয়েছে ক্লে কোর্টের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের তকমা- অদূর ভবিষ্যতে সে তকমা হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বললেই চলে। অন্য কোর্টেও সাফল্য পেয়েছেন নিয়মিতই, যার প্রমাণ ওপেন যুগের সবচেয়ে কমবয়সী ''ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম'' অর্জন- আন্দ্রে আগাসি এবং রজার ফেদেরার ছাড়া যে অর্জন নেই আর কোন পুরুষ খেলোয়াড়েরই। চৌদ্দ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক রাফায়েল নাদালই তাই সন্দেহাতীতভাবে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়।