• অ্যাশেজ
  • " />

     

    ‘বডিলাইন’ অথবা ‘ফাস্ট লেগ থিওরি’ র গল্প - ২

    ‘বডিলাইন’ অথবা ‘ফাস্ট লেগ থিওরি’ র গল্প - ২    

     

    অ্যাশেজ! ক্রিকেটের সবচাইতে পুরানো দ্বৈরথ। এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইতিহাস, পরতে পরতে আভিজাত্য। ক্রিকেট এখানে শুধুই খেলা নয়, ক্রিকেট এখানে জাতিগত বৈরিতার প্রতীক। শত বছরের পুরানো এই সিরিজে কারো স্বপ্ন ভেঙ্গেছে, নতুন তারকার জন্ম হয়েছে, কেউবা আবার সবুজ মাঠের আশ্রয় ছেড়ে জায়গা পেয়েছেন অমর রূপকথার কাব্যে।

     

    অ্যাশেজে ক্রিকেট জীবনের অংশ নয়, বরং জীবনই এখানে হয়ে যায় ক্রিকেট। ছোট্ট এই ভস্মাধারের প্রতি আবেগ যে কত তীব্র তা প্রথম অনুভূত হয় ১৯২৮-২৯ এ, ইংল্যান্ডের অস্ট্রেলিয়া সফরে। জন্ম হয় ক্রিকেটের অলটাইম কিছু গ্রেটদের। এর ফলশ্রুতিতে আসে কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজ। এই ধারাবাহিকটি বডিলাইন অ্যাশেজেরই পূর্বাপর আর খুঁটিনাটির উপর আলোকপাত করার একটা প্রয়াস। 

     


     

    প্রথম পর্বঃ 'বডিলাইন’ অথবা ‘ফাস্ট লেগ থিওরি’ র গল্প - ১

     


     

     

    ৫. উডফুল’স কিন্ডারগার্টেন

     

    আধুনিক যুগে একটা দল টানা কয়টা ম্যাচ খেলতে পারে? টানা দুইদিন ওয়ান ডে হয়তো খেলা যায় কিন্তু টানা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ? বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, অস্ট্রেলিয়া দল তাদের ১৯৩০ সালের ফিরতি সফরে টানা ১৫ দিন মাঠে খেলে কাটিয়েছিল! খেলেছিল চারটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ। এপ্রিলের ৩০ তারিখে শুরু হওয়া প্রথম ম্যাচটি ছিল তিন দিনের, বাকি তিনটিই ছিল চারদিনের ম্যাচ। আজকের আধুনিক ক্রিকেটাররা অধিক খেলায় চাপে পিষ্ট হচ্ছেন বলে প্রায়ই অভিযোগ করেন, তাদের অভিযোগও অবশ্য ভিত্তিহীন নয়। তবে খেলাটিকে যারা বাণিজ্যিকীকরণ করছেন, তারা চাইলে পাল্টা যুক্তি হিসাবে এই ঘটনার কথা তুলে ধরতেই পারেন!

     

    ইতিহাস ঐ অ্যাশেজ মনে রাখবে অনেক কারণেই। অসি খেলোয়াড়েরা মনে রাখবেন অতি বাজে ইংলিশ আবহাওয়া আর অবশ্যই একজন ব্র্যাডম্যানের জন্যে। নামেই শুধু সেই বছর ‘ইংলিশ সামার’ ছিল; প্রকৃতপক্ষে ছিল প্যাঁচপ্যাঁচে বৃষ্টি, হুল ফুটানো ঠাণ্ডা বাতাস আর রোদহীন দিনের ক্রমাগত প্রদর্শনী।

     

    এত ঠাণ্ডায় অনভ্যস্ত অস্ট্রেলীয়রা ফ্লানেলের শার্টের উপর ৩-৪ প্রস্থ সোয়েটার চাপিয়েও মাঠে কাঁপতেন। খেলাগুলোও হচ্ছিল অনেক ম্যাড়ম্যাড়ে। বৃষ্টির কারণে বারবার খেলা বাধাগ্রস্ত হওয়াটাও অবশ্য এজন্যে দায়ী। গোটা সফরে ৩১টি ম্যাচের ১৮টিই এই বৃষ্টি আর আলোকস্বল্পতার জন্যে ড্রতে পর্যবসিত হয়। তবে অস্ট্রেলিয়ার দলটাও যে দুর্দান্ত ছিল তার প্রমাণ ফলাফল আসা বাকি ম্যাচগুলো; যেখানে মাত্র দুইটি হার, আর বাকি ১১টিতেই জয়।

     

    অস্ট্রেলীয়রা সেবার ইংল্যান্ড সফর করে প্রচুর চাপ মাথায় নিয়ে। মাত্রই এক বছর আগে নিজ দেশে ৪-১ এ অ্যাশেজ হারের লজ্জা। সাথে একেবারেই অনভিজ্ঞ এক দল। এর আগে ইংল্যান্ড সফর করা মাত্র ৪ জন ছিলেন সেই দলে। বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, এই অস্ট্রেলিয়া কোনভাবেই কোন টেস্ট জিততে পারবে না। ইংলিশ গণমাধ্যম আরো এককাঠি সরেস হয়ে এই দলের নাম দিয়ে দিল ‘উডফুল’স কিন্ডারগার্টেন’। বিল উডফুল ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান দলের অধিনায়ক, তেত্রিশ বছর বয়সে প্রথম অধিনায়কত্ব পাওয়া বিলের সেটাই প্রথম সিরিজ। 

     

    ইংলিশ মিডিয়ার উপহাস আর নিজ দেশের ক্রিকেটানুরাগীদের অবজ্ঞার জবাব দেয়ার জন্য তাঁর একটা পথই খোলা ছিল। তিনি সেটাই বেছে নিলেন। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচাইতে কম বয়সী অস্ট্রেলীয় স্কোয়াড নিয়ে তিনি পুনরুদ্ধার করলেন অ্যাশেজ। মাথায় রাখবেন, শুধু ইংলিশরাই তার প্রতিপক্ষ ছিলনা, প্রতিপক্ষ ছিল বিরুদ্ধ আবহাওয়া আর মাথার উপর খড়গের মত ঝুলতে থাকা প্রবল চাপ।

     

    ‘ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ বলতে আসলে যা বুঝায় বিল উডফুল ছিলেন ঠিক তাই। প্রয়োজনের সময় ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যেতেন পর্বতের মত। ‘রক অব জিব্রাল্টার’ নামটি সে কারণেই পাওয়া। ফিল্ডিং সাজাতেন অনবদ্যভাবে। বোলিং অপশন হাতে বেশি নেই জানতেন, তাই সামান্য অস্ত্রগুলোকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এমনভাবে ব্যবহার করতেন যে ইংলিশরা উইকেট দিয়ে আসতে বাধ্য হত।

     

    তাঁর অধিনায়কত্বেই জন্ম হয় একজন কালজয়ী বোলার ক্ল্যারি ভিক্টর গ্রিমেট-র। আগেও ইংল্যান্ড সফর করা এই লেগ ব্রেক বোলার অতটা আলো না পেলেও এই সফরে তিনি তাঁর মায়াবী জাদু দিয়ে ইংলিশদের একেবারে নাস্তানাবুদ করে ছাড়লেন। সিরিজের প্রথম টেস্টেই নিলেন ১০ উইকেট। গ্রিমেট এর প্রধান অস্ত্র ছিল নিখুঁত লেংথ। মাঝে মাঝে কয়েকটি গুগলি আর ছদ্মবেশী টপস্পিন। ইংলিশরা তাঁকে একেবারেই পড়তে পারছিল না। ফলাফল হচ্ছে পরের দুই টেস্টে যথাক্রমে আট আর ছয় উইকেট শিকার। চতুর্থ টেস্টে অবশ্য তিনি কোন উইকেট পাননি, তবে তা পুষিয়ে দেন শেষ টেস্টে ৫ উইকেট নিয়ে। ঐ টেস্ট জিতেই অস্ট্রেলিয়া আবার অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করে।

     

    তরুণ দল হলেও ঐ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ ছিল দুর্দান্ত। ওপেনিংয়ে উডফুল আর পন্সফোর্ড এর মত পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মিডল অর্ডারে ব্র্যাডম্যান, কিপাক্স আর রিচার্ডসনের সহজাত শট খেলার প্রতিভা, লোয়ার অর্ডারে শুরুতে ওল্ডফিল্ড যিনি উইকেটকিপিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং-ও পারেন একটু আধটু। তবে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায় এই দল।

     

    দ্বিতীয় ইনিংসে ব্র্যাডম্যানের অনবদ্য ১৩১ আর অভিষিক্ত স্ট্যান ম্যাককেবের ৪৯ এর সুবাদে লড়াই করলেও ইংলিশদের ৪২৯ রানের টার্গেট অতিক্রম করা আর হয়নি। তবে ৪২৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শেষ ইনিংসে ৩৩৫ রান তোলা, তাও বৃষ্টি হওয়া ভারি পিচ এবং আউটফিল্ডের মাঠে। বাকি সফরের রসদ অস্ট্রেলিয়া আসলে সেখান থেকেই তুলে নেয়।

     

    দ্বিতীয় টেস্ট লর্ডসে। উৎফুল্ল ইংলিশ অধিনায়ক চ্যাপম্যান টস জিতে কোন চিন্তা না করেই ব্যাটিং নিয়ে নিলেন। দুলীপসিংজির ক্যারিয়ারসেরা ১৭৩ রান ইংল্যান্ডকে নিয়ে গেল ৪২৫ রানের চূড়ায়। প্রথমদিন শেষে মোটামুটি সবাই ধরে নিলেন এই টেস্টও ইংল্যান্ড হারছে না! কিন্তু অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন একজন উডফুল, একজন কিপাক্স এবং একজন ব্র্যাডম্যান! ব্র্যাডম্যান কি করতে পারেন তা তিনি দেখিয়ে দিলেন সেই টেস্টেই। আগের টেস্টে সেঞ্চুরির পর এই টেস্টে পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক। তাঁর স্ট্রোক-ঝলমলে ২৫৪, সাথে উডফুলের ১৫৫ আর কিপাক্সের ৮৩ রানে অস্ট্রেলিয়া স্কোরবোর্ডে তুললো ৬ উইকেটের বিনিময়ে ৭২৯ রান।

     

    উডফুল ইনিংস ঘোষণা না করলে তারা কোথায় গিয়ে থামতেন কে জানে! ওটাই ছিল তখন পর্যন্ত অ্যাশেজে কোন দলের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের ইনিংস হার এড়াতেই দরকার ছিল ৩০৪। যার ব্যাটের দিকে ইংল্যান্ড তাকিয়ে ছিল- সেই ওয়ালি হ্যামন্ড, আগের অ্যাশেজ সিরিজের নায়ক, আশ্চর্যজনকভাবে এই সিরিজের টানা ৪ ইনিংসে ব্যর্থ হলেন। ইনিংস হার এড়ালেও ইংল্যান্ড মাত্র ৭২ রানের লক্ষ্য দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়া পায় ৭ উইকেটের জয়।

     

     

     

    ৬. দ্য ব্র্যাডম্যান শো

     

    হেডিংলির তৃতীয় টেস্ট হচ্ছে পুরোপুরি ব্র্যাডম্যান শো। টসে জিতে উডফুল ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সিদ্ধান্তকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে তাঁর ব্যাটিং পার্টনার সময় নিলেন মাত্র ৮ মিনিট। প্রথম উইকেট পতনের পরই নামলেন ব্র্যাডম্যান। এরপর যেভাবে বলা হয় আর কি- ‘বাকিটা ইতিহাস’। লাঞ্চ এর আগেই তিনি তুলে নিলেন শতক, চা বিরতির আগে দ্বিশতক আর দিনশেষে অপরাজিত থাকলেন ৩০৯ রানে।

     

    মধ্যাহ্নবিরতির আগে সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার ইতিহাস এ ঘটনার আগে ছিলই মাত্র দুটো, দুটোই অস্ট্রেলীয় কীর্তি। চার্লস ম্যাকার্টনি চার বছর আগে এই মাঠেই তা করে দেখিয়েছিলেন। সর্বপ্রথম করেছিলেন ভিক্টর ট্রাম্পার ১৯০২ সালের ম্যানচেস্টার টেস্টে। ব্র্যাডম্যানের পরবর্তী কীর্তিটি আরো ৪৭ বছর পরের, পাকিস্তানের মাজিদ খানের। দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই কীর্তি আছে মাত্র এই চারজনেরই। তবে প্রথম দিনে ত্রিশতক তুলে নেয়ার কীর্তি আর কারোরই নেই! গেইল, ভিলিয়ার্সদের বিধ্বংসী ব্যাটিং এর কথা বলার আগে তাই ব্র্যাডম্যান এর কথাটাও কিন্তু আপনার মাথায় রাখতে হবে। আরেকটা ব্যাপার কি জানেন? ওটা ছিল টেস্টের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরি!

     

    শেষ পর্যন্ত ব্র্যাডম্যান আউট হন ৩৩৪ রানে। ভেঙ্গে দেন অ্যান্ডি স্যান্ডহাম এর ৩২৫ রানের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডও। ওই ইনিংসেই টেস্টে তাঁর হাজার রান পূর্ণ হয়। মৌসুমে তাঁর রান ২০০০ ছাড়িয়ে যায়। সাথে স্পর্শ করেন ম্যাকার্টনির টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড।

     

    দুর্ভাগ্যবশতঃ অস্ট্রেলিয়া ওই টেস্ট জিততে পারেনি। তৃতীয় দিন বৃষ্টিতে একেবারে ভেসে যায়। চতুর্থ দিনেও আলোক স্বল্পতার কারণে খেলা তেমন হতে পারেনি। ফলোঅনে পরেও ইংল্যান্ড তাই টেস্ট বাঁচিয়ে ফেলে।

     

    ওল্ড ট্রাফোর্ডের চতুর্থ টেস্টও শুধু বৃষ্টির গল্প। তাই ওভালের শেষ টেস্টটিই ছিল সিরিজ নির্ধারক ম্যাচ।

     

    এই ম্যাচ হচ্ছে ডন ব্র্যাডম্যানের অমরত্ব পাবার ম্যাচ। হার্বার্ট সাটক্লিফের ১৬১ রানে ভর করে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৪০৫ রান তুলেও এই ম্যাচ ইনিংস ব্যবধানে হারে! ব্র্যাডম্যানের ২৩২ আর পন্সফোর্ডের ১১০ অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যায় ৬৯৫ রানের অস্পর্শনীয় শিখরে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভড়কানো, হতভম্ব ইংল্যান্ড আর লিডই নিতে পারেনি। ইনিংস ও ৩৯ রানে টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়া ২-১ ব্যবধানে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করে। বিল উডফুল তাঁর জন্মদিনে হাতে তুলেন ছোট্ট ভস্মাধার।

     

    ডন ব্র্যাডম্যান ঐ সিরিজে কতটা অমানবীয় ছিলেন তা আপনি এই উক্তিটি থেকে বুঝতে পারেন-

     

    ''আর কোন ক্রিকেটারই দর্শকদের এতটা অনুরণিত করতে পারেননি। বেব রুথকে ইয়াঙ্কি স্টেডিয়ামে দর্শককে উদ্বেলিত করতে অবস্থায় দেখা যতটা গৌরবের, আলীকে ম্যাডিসন স্কোয়ারে প্রতিপক্ষকে এক পাঞ্চে নকড আউট করতে দেখাটা যতটা রোমাঞ্চকর, বীটলসকে ক্যাভার্নে গান গাইতে দেখা যতটা উত্তেজনাপূর্ণ, ডন ব্র্যাডম্যানকে ব্যাট করতে দেখাটা ঠিক ততটাই মনোমুগ্ধকর আর সম্মানের। শুধুমাত্র শচীন টেন্ডুলকারই পরবর্তীতে এই অনুরণনের কিছুটা দর্শকদের মাঝে সঞ্চারিত করতে পেরেছিলেন। ''

     

     

    তাঁর ৩৩৪ রানের ইনিংসের পর লন্ডন টাইমসের সান্ধ্য সংস্করণের শিরোনাম ছিল- ‘হি'জ আউট’!!  ঐ সিরিজে দুইটা দ্বিশতক এবং একটা করে ত্রিশতক আর শতকের সুবাদে তাঁর সর্বমোট রান ছিল ৯৭৪। ভেঙ্গে দিয়েছিলেন মাত্রই আগের অ্যাশেজে করা ওয়ালি হ্যামন্ডের ৯০৫ রানের রেকর্ড। পাঁচটি টেস্ট খেলেছিলেন ঠিক আছে; কিন্তু এর তিনটিতেই তিনি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। সুযোগ পেলে নিশ্চিতভাবেই এই রান হাজার ছাড়িয়ে যেত। এক সিরিজে সর্বোচ্চ রান করার এই রেকর্ড আজ অব্দি আর কেউ ভাঙ্গতে পারেননি। 

     

    ব্র্যাডম্যানের প্রতিটা ইনিংসই যেন ছিল একেকটা গল্প, একেকটা ইতিহাস। কবিতা তাঁর ব্যাটের পল্লব পরশে হয়ে যাচ্ছিল নিছক শব্দগুচ্ছ। কোন লেখাই তাঁর ইনিংসগুলো বর্ণনার জন্যে তাই যথেষ্ট না। দুর্ভাগ্যক্রমে তখন টেস্ট টেলিভিশনে দেখানোর প্রযুক্তি ছিল না। তাই এই ইনিংসগুলো এখন শুধুই শুকনো পরিসংখ্যানের কচকচানিতে বন্দি, কিছু ফিচারের শব্দগুচ্ছতে আবদ্ধ; দৃশ্যকাব্য হয়ে আধুনিক কোন ক্রিকেটানুরাগীকে উদ্বেলিত করতে পারার কোন ক্ষমতা যে তার নেই। 

     

    ডন ব্র্যাডম্যানের সার্থকতা শুধু একজন সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবেই নয়। তিনিই যে ক্রিকেটের প্রথম ‘আইকনিক ফিগার’। ব্র্যাডম্যান এ যুগে জন্মালে তাঁঁর বিলবোর্ড দিয়ে পুরো দুনিয়া ছেয়ে যেত; এতোটাই ছিল তাঁর জনপ্রিয়তা। শুধু তাঁর ব্যাটিং দেখার জন্যেই মানুষ কাজ ফেলে মাঠে ছুটে আসত, আবার তিনি আউট হয়ে গেলে মাঠ থেকেই কাজে চলে যেত।

     

    তাঁর সৌজন্যেই ক্রিকেট নেমে আসে অভিজাতদের শ্রেণী থেকে সাধারণের কাতারে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও আরো অনেক দেশে ক্রিকেট হয়ে উঠে জনপ্রিয় খেলা। ক্রিকেটের বিশ্বায়নের পথিকৃৎ হিসেবে তাই ব্র্যাডম্যানেরও নাম আসবে। এজন্যেই তো তিনি ডন, ক্রিকেটের সন্দেহাতীত সম্রাট। তিনি অস্পর্শনীয়, কেউ কোনদিনই তাঁকে ছুঁতে পারবে না।

     

    (চলবে)