• " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : চেনা জিম্বাবুয়ে, চেনা জয়!

    ২২ গজের সেলুলয়েড : চেনা জিম্বাবুয়ে, চেনা জয়!    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!

     

     

    ভাগ্য-দুর্ভাগ্য!

     

    ঋদ্ধিমান সাহার সঙ্গে কি দেখা হয়েছিল রিচমোন্ড মুতুম্বামির, এই ম্যাচের আগে!

     

    মোহালি বা ঢাকা, দুই জায়গাতেই দুই উইকেটকিপারের ভাগ্য যে সুপ্রসন্ন হয়ে দেখা দিল একদিন আগে পরে! রবি আশ্বিনের বলটা ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে মিস করেছিলেন হাশিম আমলা, সাহা ধরতে পারেননি বল। তাঁর বুকে লেগে স্ট্যাম্প ভেঙ্গে গেল, স্ট্যাম্পড আমলা।

     

    সিকান্দার রাজার বলটাও ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গেলেন সাকিব আল হাসান, মিস করলেন। মিস করলেন মুতুম্বামিও। তবে বল গ্লাভস থেকে বেরিয়ে এসে ঠিকই আঘাত হানলো স্ট্যাম্পে, স্ট্যাম্পড সাকিব! তবে একটু পরে এই ভাগ্যটা ঠিক ‘সুপ্রসন্ন’ হলো না মুতুম্বামির জন্য, যখন লুক জঙ্গোয়ির ওয়াইড বলটা ধরতে গিয়ে আঘাত পেলেন! খেলা বন্ধ থাকলো বেশ কিছুক্ষণ, শেষ পর্যন্ত কিপিং বাদ দিয়ে উঠেই যেতে হলো মুতুম্বাবিকে! করতে পারলেন না ব্যাটিংও!

     

    কিপার ওয়েলার!

     

    বাবা জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলেছেন, চাচাতো ভাই খেলছেন বয়সভিত্তিক দলে। বাবা ও ভাই, দুজনই ডানহাতি মিডিয়াম পেসার, ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ওয়েলার ডানহাতেই ব্যাটিং-বোলিং করেন, শুধু বোলিংটা অফস্পিন। সেই ওয়েলারকেই কিপিংয়ের গ্লাভস তুলে নিতে হলো, নিয়মিত উইকেটকিপার মুতুম্বামি উঠে যাওয়ায়। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো অবশ্যই। কিপিংয়ের অভ্যাস আছে সিকান্দার রাজার, হয়তো আসতেন তিনিই। কিন্তু তখন যে তিনি ব্যস্ত বোলিংয়ে, জিম্বাবুয়ে ইনিংসে সবচেয়ে সফল বোলারও রাজাই ( ৪৭/২)

     

    ‘ফাস্ট’ মুশি

     

    ২০১১ সাল, হারারে। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহিমের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি (১০১)। ৫ রানে ম্যাচটি হেরেছিল বাংলাদেশ, ৫ ম্যাচের সিরিজটিও হেরেছিল তখনই। দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি (১১৭) গত বছর এশিয়া কাপে, ভারতের সঙ্গে। ফতুল্লায় সে ম্যাচ বাংলাদেশ হেরেছিল ৬ উইকেটে। তৃতীয়টি (৭৭ বলে ১০৬) এই বছর, পাকিস্তানের সঙ্গে মিরপুরেই। বাংলাদেশ জিতেছিল সে ম্যাচ। চতুর্থ সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন এ বছরই, সেই প্রথম সেঞ্চুরির প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই।

     

    আজকের সেঞ্চুরির আগে সব ক'টিরই স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০ এর ওপরে, ১০১, ১০৩.৫৩, ১৩৭.৬৬। স্ট্রাইক রেট ১০০-র কোটা ছুঁলো না এবার, মুশির ইনিংসের স্ট্রাইক রেট অবশ্য খুব কমও নয়, ৯৮.১৬! তবে মুশি জিতলেন এই ম্যাচ, হারারেতে সেই সেঞ্চুরির পরেও ম্যাচ হারার জ্বালাটা কি ভুললেন!

     

    জঙ্গোয়ি ওপেনার

     

    ১৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৮ নম্বরের আগে ব্যাট করেছিলেন মাত্র ৪ বার। মূলত টেলএন্ডার, অথচ এ ম্যাচে কিনা ওপেনিংয়ে এলেন লুক জঙ্গোয়ি! মূল যে ওপেনার, সেই রিচমোন্ড মুতুম্বামি আবার তাঁর বল ধরতে গিয়েই চোট পেয়েছিলেন। তাঁর জায়গাতেই এলেন জঙ্গোয়ি, করলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ রান। এমনিতে ওপেনিং বোলিং করেন, নেমেছিলেন যে চামু চিবাবার সঙ্গে, তিনিও এর আগে করেছিলেন ওপেনিং বোলিং!

     

    দুই ওপেনার, ভোল পালটে এলেন ব্যাটিংয়ের ওপেনিংয়ে!

     

    মোহালি টেস্টে ভার্নন ফিল্যান্ডারকেও ওপেনিংয়ে পাঠিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা; সম্ভবত পিঞ্চ হিটিংয়ের জন্য।মোহালি টেস্ট হেরেছে প্রোটিয়ারা, মিরপুরে জিম্বাবুয়ে হেরেছে ওয়ানডে! 

     

    ম্যাশের প্রথম, ম্যাশের ২০০তম!

     

    এর আগের ১৫৭ ম্যাচে মাশরাফি যা করেননি, এবার করলেন তাই। এলেন ৫ নম্বরে বোলিং করতে! মুস্তাফিজুরের সঙ্গে ওপ্রান্তে আনলেন আরাফাত সানিকে। তারপর সাকিব, আল-আমিন। ৫ নম্বরে এসে সিকান্দার রাজাকে ক্যাচ বানালেন, যদিও রাজা তাতে খুশী হননি খুব একটা! তাতে কী, মাশরাফি রাজাকে আউট করেই পেলেন বাংলাদেশের হয়ে ২০০তম ওয়ানডে উইকেট, আব্দুর রাজ্জাক ও সাকিব আল হাসানের পর। ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট ছিল আগেই, তবে মাশরাফির একটি উইকেট আফ্রো-এশিয়া কাপে, এশিয়া একাদশের হয়ে।

     

    চিগুম্বুরার ১০০ ছয়

     

    ২৯তম ওভারের প্রথম বলে সাকিব আল হাসানকে লং-অনে উড়িয়ে মারলেন এল্টন চিগুম্বুরা। চিগুম্বুরার ১০০-তম ছক্কা ওয়ানডেতে। প্রথম জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে ছক্কার সেঞ্চুরি করলেন চিগুম্বুরা। অবশ্য জিম্বাবুইয়ান অধিনায়কের আগে ওয়ানডেতে আরো ২৬ ব্যাটসম্যানের আছে এই কীর্তি, ৩৯৮ ম্যাচে ৩৫১টি ছয় নিয়ে তালিকার প্রথম নাম পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির।

     

    সাকিবের প্রথম ৫!

     

    টেস্টে ৫ উইকেট আছে ১৪ বার। ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট নিয়েছেন, এমন ৩৭ জনের তালিকাতেও আছেন। তবে বাকি ৩৬ জনের সঙ্গে পার্থক্য ছিল একটি, সাকিব যে এর আগে ইনিংসে ৫ উইকেট পাননি একবারও! সেই পার্থক্যটা দূর করলেন, নিজের দশম ওভারের ৫ম বলে। তিনাশে পানিয়াংগাকারাকে বোল্ড করলেন, পেলেন ৫ উইকেট, ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো!