• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    বিশ্বকাপ থাকুক বিশ্বকাপের রূপেই

    বিশ্বকাপ থাকুক বিশ্বকাপের রূপেই    

    ক্রিকেটের মতো এমন বহুমুখী ফরম্যাটের ‘ফিল্ড-টিম-গেম’ আর নেই বোধহয়। ‘আসল ক্রিকেট’ বলা হয় টেস্টকে, আর ক্রিকেটের বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়ানডের টুর্নামেন্ট দিয়ে! টি-টোয়েন্টি দিয়েও আবার ‘বৈশ্বিক-চ্যাম্পিয়ন’ হওয়া যায়! অন্য অনেক খেলার সঙ্গে ক্রিকেটের পার্থক্যের এটিও তো একটি! আসলে গুরুত্ব দেব কাকে বেশী? ‘আসল ক্রিকেট’ টেস্ট, ‘বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন হওয়ার’ ওয়ানডে, নাকি ‘মাথা খারাপ করে দেওয়া টাকার খেলা’ আর ‘ক্ষমতার প্রমত্তা’ টি-টোয়েন্টিকে? ক্রিকেটের ভবিষ্যতই বা কী! তিন ফরম্যাটের সহাবস্থান, নাকি একটির জন্য আরেকটির জায়গা করে দেওয়া?

    ****

     

     

    এ বিশ্বকাপ নতুন বেশ কিছু দিক দিয়ে। দুটি পাওয়ারপ্লে, নন-পাওয়ারপ্লে ওভারগুলোতে বৃত্তের বাইরে চারজন ফিল্ডার, দুদিক থেকে দুটি নতুন বল। তবে সব নিয়মই ব্যাটিং-সহায়ক, সন্দেহ নেই। ফল হয়েছেও তাই। তিনটি চারশ পেরোনো ইনিংস, দুটি ডাবল সেঞ্চুরি। বেড়েছে গড় রান রেট। বেড়েছে শেষ ১৫ ওভারে রান তোলার গতিও। কি প্রথম ইনিংস, কি রান তাড়া করা, সবক্ষেত্রেই পরিবর্তন এসেছে এমন।

     

     

    ****

    এমন পরিবর্তনের পেছনে চালিকাশক্তি কে? নিয়ম তো বটেই, টি-টোয়েন্টির প্রভাব, আর নতুন এক ‘ক্রিকেট-ব্রান্ড’! এই পরিবর্তনটা পরিসংখ্যান দিয়ে ঠিক বোঝানো যাবে না, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বোধহয় এটিই। আক্রমনাত্মক ক্রিকেটের ব্র্যান্ড। পুরোনো জিনিসকে যেন নতুন করে পরিবেশন করলেন মাইকেল ক্লার্ক, ব্রেন্ডন ম্যাককালামরা। বিশেষত ম্যাককালাম আর তার নিউজিল্যান্ড।

     

     

    নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের 'ব্র্যান্ড'টাই বোধহয় হবে আগামী দিনের ওয়ানডের ‘স্টাইল’। ব্যাটসম্যান অনুকুল সব নিয়মে আক্রমণাত্মক হতেই হবে, নাহলে উইকেট মিলবে না, আর উইকেট না মিললে রানও আটকানো যাবে না। খুবই ‘সহজ’ একটা হিসাব।

     


    ম্যাককালামও সেটাই করেছেন। এই যুগেও চার-পাঁচটা স্লিপ রেখেছেন, এক বোলারকে দিয়ে করিয়েছেন টানা দশ ওভার! কমবেশি করেছেন মাইকেল ক্লার্কও। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে সেরা দুটি দল বলা হচ্ছিল, শুধু পরিসংখ্যান নয়, খেলার ধরনেও তারাই ছিল এগিয়ে।

     

     

    ****

    কিন্তু ব্যাট-বলের ভারসাম্যটাও তো রক্ষা করা প্রয়োজন। ব্যাট ভারি হচ্ছে দিন দিন, নিয়ম বানানো হচ্ছে ব্যাটসম্যান সহায়ক, আর বোলারদের লাগাম শক্তই হচ্ছে। ভারসাম্যটা রক্ষা হবে কীভাবে? অবশ্যই নন-পাওয়ারপ্লে ওভারগুলোতে বৃত্তের বাইরের ফিল্ডারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আগের মতো ৫, চাইলে বাড়িয়ে ৬টিও করা যায়। এক ওভারের বাউন্সার ২টি থেকে বাড়িয়ে ৩টি হতে পারে। আর বোলারের ওভারের ‘কোটা’ বাড়ানো যায়। হয়তো সব বোলারদের জন্য নয়, তবে অধিনায়ক চাইলে কোনো এক বা একাধিক বোলারকে দিয়ে করাতে পারেন ১২-১৫ ওভার। এমনিতেও রান প্রসবা ওয়ানডেতে পঞ্চম বোলারের জায়গাটা ‘পার্ট-টাইমার’ দিয়েই পূরণ করা হচ্ছে প্রায়।

     

    ****

    বোলাররা অদ্ভূত এক ‘প্রজাতি’। মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও প্রচন্ড। এ বিশ্বকাপেও দেখুন। ‘রান-প্রসবা’, ‘রান-প্রমত্তা’, কত অভিধায় অভিহিত করা হচ্ছে। মাঝখান দিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে বসেছেন একজন পেসার (মিচেল স্টার্ক)! দুটি নতুন বলে রিভার্স সুইং নিয়ে আশঙ্কাটা বাড়া স্বাভাবিক, অথচ রুবেল হোসেনের রিভার্স সুইং এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই ইতিহাস (ইংল্যান্ডেরও বটে, কালো হোক, ইতিহাস তো)! ড্যানিয়েল ভেট্টোরির মত স্লো লেফট আর্ম বোলারও আবার অনন্য ইকোনমি রেটে (৪.০৪) বল করলেন! মাঠ ছোট, ব্যাট ভারি, এখানে-ওখানে অদৃশ্য সব লাগাম- তবুও বোলাররা ছুটে চললেন!  

     

     

    ****

    ওয়ানডের নিয়ম পরিবর্তন হোক বা না হোক, বোলাররা ছুটবেনই। ছুটবে ওয়ানডে ক্রিকেটও। অন্তত এবারের বিশ্বকাপ তাই বলে। তবে আইসিসির পরবর্তী বিশ্বকাপে ১০ দলের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে। সহযোগি দেশগুলো বিশ্বকাপের অলঙ্কার। এবারও বেশ কয়েকটি রোমাঞ্চকর ম্যাচ উপহার দিয়েছে তারা।  

     

     

    দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টির ছোট ছোট টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হোক। এসবই ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির চাহিদা মেটাবে। টেস্টের বিশ্ব-চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হোক, সব দলই সবার সঙ্গে টেস্ট খেলুক। আর চার বছর পর পর ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হিসেবে আসুক বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের বিশ্বকাপ। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। বেশী দলের বিশ্বকাপ। কমদিনের বিশ্বকাপ। রোমাঞ্চকর বিশ্বকাপ। আক্রমনাত্মক বিশ্বকাপ।

     

     

    ২০১৫ এর মতো বিশ্বকাপ।

    তাই আশায় ঘর বাঁধি, ‘টেল মি ইউ গট দ্য পাওয়ার......, ওয়ানডে ক্রিকেট’!