• বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ ২০১৫
  • " />

     

    মুস্তাফিজ ম্যাজিকেই জব্দ ভারত

    মুস্তাফিজ ম্যাজিকেই জব্দ ভারত    

    সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ বাংলাদেশ ৩০৭/১০, ৪৯.৪ ওভার (তামিম ৬০, সৌম্য ৫৪, সাকিব ৫২; অশ্বিন ৩/৫১, ভুবনেশ্বর ২/৩৭); ভারত ২২৮/১০, ৪৬ ওভার (রোহিত ৬৩, রায়না ৪০; মুস্তাফিজ ৫/৫০, তাসকিন ২/২১)

     

    ফলঃ বাংলাদেশ ৭৯ রানে জয়ী।

     

    প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচঃ মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)

     

    কোনটা ছেড়ে কোনটার গল্প করবে আজ বাংলাদেশ? বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ‘ন্যায্য’ জয় থেকে বঞ্চিত হওয়ার শোধ নাকি ‘স্বীকৃত’ স্পিনস্বর্গের দেশের একাদশে চার পেসারের বিস্ময়? গল্পের রসদ তো এখানেই শেষ নয়...তাসকিনের পর অভিষেকেই আরেক পেসার মুস্তাফিজের চার উইকেট, বছরখানেক আগে-পরে সেই ভারতের বিপক্ষেই! এক ম্যাচে এতকিছুর দিনটাও যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য পুরনো পয়া! এক দশক আগের ১৮ই জুনেই তো কার্ডিফের মাঠে প্রথম ও এখনও পর্যন্ত শেষবারের মতো অসিবধ করেছিল টাইগাররা। সেই দল আর এই দলের একমাত্র ‘কমন’ সদস্যটি এখন একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেনাপতিই!  ম্যাচের আগেই রীতিমতো জয়ের ঘোষণা দিয়ে বসেছিলেন, মিরপুরের বাঘের ডেরায় তাঁর সেনারা আজ দোর্দণ্ড প্রতাপেই সেটার বাস্তবায়ন করলেন। অন্তত ঘরের মাঠে ক্রমেই অজেয় হয়ে ওঠা বাংলাদেশের কাছে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হার মানলো ধোনি-কোহলিদের ভারত। আর হ্যাঁ, সে সুবাদে ঘরের মাঠে টানা নবম জয়টিও নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ।

     

    অথচ ৩০৮ রানের বড় লক্ষ্যটাকে একটা পর্যায় পর্যন্ত বেশ মামুলিই মনে হচ্ছিল রোহিত-ধাওয়ানদের কাছে। প্রায় ১৬ ওভারের খেলা শেষেও ভারতীয় দলের স্কোরবোর্ডে ৯৫ রানের পাশে উইকেটে ঘরে শুন্যতাটুকু বেশ অস্বস্তিই জাগাচ্ছিল। অবশ্য ইনিংসের শুরুতেই পরপর দু’ওভারে উইকেটের পিছনে ধাওয়ানকে জীবন দেন মুশফিকুর রহিম। সেটা পুষিয়ে দিতেই কিনা দিনশেষে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী ভারতের পাঁচ পাঁচজন ব্যাটসম্যান! শুরুটা আবার সেই শিখর ধাওয়ানকে দিয়েই! তাসকিন-মুস্তাফিজদের উপর্যুপরি আক্রমণে বিনা উইকেটে ৯৫ রানের স্কোরবোর্ড খানিকবাদেই ৫ উইকেটে ১২৯!

     

     

    দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ দলে বাঁহাতি পেসারের শূন্যতা পূরণ করা মুস্তাফিজের দুর্দান্ত সব কাটারে একের পর এক ধরাশায়ী হলেন রোহিত, রাহানে, রায়না, অশ্বিন, জাদেজারা। ফাঁকে ফাঁকে সাকিব-মাশরাফিদের মিলিত অবদানে ভারতের ইনিংস গুটিয়ে গেল মাত্র ২২৮ রানে! ওপেনার রোহিত শর্মার দলীয় সর্বোচ্চ ৬৩ রান বাদে চল্লিশের ঘর পেরোতে পারেন নি আর কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যানই।

     

    এর আগে টসজিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথমবারের মতো ভারতের সঙ্গে ৩০০ রানের মাইলফলক পেরোয় বাংলাদেশ। ৩০৭ রানের লক্ষ্য কম নয় মোটেই কম ছিল না। কিন্তু তারপরও আফসোস থেকেই যাচ্ছিল। আচমকা বৃষ্টিতে ছন্দপতন নাহলে হয়তো তামিম, মুশফিক, লিটনরা অত দ্রুত ফিরে যেতেন না! শেষদিকে সাকিব, নাসির বা সাব্বিরদের কেউ যদি পুরো ৫০ ওভার খেলার চেষ্টা করতেন। এসবের যে কোনো একটি হলেও বাংলাদেশের রান সাড়ে তিনশ' ছুঁয়ে ফেলতে পারতো।

     

    কিন্তু তামিম আর সৌম্য যেভাবে শুরু করেছিলেন তাতে ছিল আরও বড় কিছুর আভাস। দুজন মিলে ১৩ ওভারেই করে ফেলেছিলেন ১০০ রান। এরপর সৌম্য আউট হয়ে যাওয়ার পর লিটনকে নিয়ে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলেন তামিম। কিন্তু ১৫.৪ ওভারের মাথায় বৃষ্টি এসে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। তামিম তখন দুর্দান্ত খেলছিলেন, বড় কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন।

     

     

    বৃষ্টির পরে ৬০ রানের মাথায় হঠাৎ করেই মনযোগ হারিয়ে বসেন তামিম। এর ৮ রান পর লিটন আউট হয়ে যান, সাকিবকে নিয়ে মুশফিক ভালো কিছুর আশা দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু সাময়িক রানখরা কাটল না এই ম্যাচেও, ১৪ রানেই আউট হয়ে গেলেন মুশফিক। এরপর সাকিব আর সাব্বির মিলে হাল ধরেন। কিন্তু ব্যাটিং পাওয়ার প্লের কিছুক্ষণ আগে ৪১ রান করে আউট হয়ে যান সাব্বির। নাসিরকে নিয়ে সাকিব বড় কিছু হবে বলেই স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন সবাইকে। কিন্তু সাকিবও খুব বেশিক্ষণ আর থাকেননি, ফিরে গেছেন ৫২ রানেই। শেষদিকে টেল এন্ডাররাও বেশিক্ষণ থাকেননি। মাশরাফির ১৮ বলে ২১ রান না হলে তো বাংলাদেশ ৩০০-ই পার হয় না। শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকতে হয় ৩০৭ রানেই।