• বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ ২০১৫
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : চার পেসার আর মিরপুরের জয়োচ্ছ্বাস

    ২২ গজের সেলুলয়েড : চার পেসার আর মিরপুরের জয়োচ্ছ্বাস    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে! 

     

     

    চতুষ্টয় ভয়ংকর

     

    বাংলাদেশ নাকি সব স্পিনারের দেশ! বাঁহাতি স্পিনারের খনিও নাকি এখানে। ভারতের সঙ্গে একমাত্র টেস্টেও চার স্পিনারের সঙ্গে মাত্র এক পেসার নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশই কিনা প্রথম ওয়ানডেতে খেলতে নামলো চারজন পেসার নিয়ে! মাশরাফি, রুবেল, তাসকিনের সঙ্গে অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর। দলের একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার সাকিব বোলিং করতে এলেন ছয় নম্বরে! চার পেসার মিলেই নিলেন আট উইকেট। বাংলাদেশে কি শুরু হয়ে গেল নতুন যুগ!

     

    যাত্রা হলো শুরু....

     

    একজনের অভিষেক হয়েছে টেস্টে, আরেকজনের টি-টোয়েন্টিতে। তবে মিরপুরে লিটন কুমার দাস ও মুস্তাফিজুর রহমান মিললেন একই মোহনায়। দুজনেরই যে ওয়ানডে অভিষেক হলো এদিন। ব্যাট হাতে ৮ রান করে ফিরেছেন লিটন, আর মুস্তাফিজুর যেন ছাড়িয়ে গেছেন নিজের স্বপ্নের পরিসীমাও!

     

    পরিবর্তিত দেঁজা ভুঁ  

     

    গত বছর জুন মাসের ১৭ তারিখ। মিরপুর। তাসকিন আহমেদের স্বপ্নীল অভিষেক, ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে বেঁধে ফেললেন ১০৫ রানে। তবে বাংলাদেশের বুকে বিঁধলো আরেকটি ৫৮ রানের কাঁটা, সেই স্মৃতি কি এখনও পোড়ায় তাসকিনকে? এমন অভিষেকের পরও যে হারতে হয়েছিল তাঁকে।

     

    প্রায় এক বছর পর আরেকটি জুন মাস। এবার ১৮ তারিখ। অভিষেক আরেক বোলারের, মুস্তাফিজুর। ৫ উইকেট নিলেন তিনিও, জিতলো বাংলাদেশ, মুস্তাফিজ হলেন ম্যাচসেরা। মুস্তাফিজ মনে রাখবেন এই ম্যাচ, হয়তো আজীবনই।

     

    সংঘর্ষ


    নিজের তৃতীয় ওভারে রোহিত শর্মার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে গেল মুস্তাফিজের। বলের দিকে তাকিয়ে রোহিতের রান নেওয়ার রাস্তায় চলে এলেন, রোহিত তো রীতিমত আঙ্গুল উঁচিয়ে ‘সতর্ক’ করলেন মুস্তাফিজকে। পরে অবশ্য মিটমাট হলো সব। আসলে হলো না। নিজের সপ্তম ওভারে আবার একই কাজ করলেন মুস্তাফিজ। এবার ব্যাটসম্যান ধোনি। রোহিতের মতো সতর্ক করলেন না তিনি, ধাক্কা খেয়ে ক্রিজের একপাশে ছিটকে গেলেন বাংলাদেশী পেসার। শুধু তাই নয়, যেতে হলো মাঠের বাইরেও!

     

    এ যাত্রায় ধোনির হাতে ‘ধাক্কা’ খেলেও ম্যাচে ভারতকেই বেশ বড়সড় এক ধাক্কা দিয়েছেন সাতক্ষীরার তরুণ।

     

    কিপার কোহলি

     

    এর আগেও কিপিং করেছেন, মহেন্দ্র সিং ধোনির জায়গাতেই। তবে ধোনি যখন হাতে বল তুলে নিয়েছিলেন তখন, কিন্তু এবার ধোনি মাঠের বাইরেই চলে গেলেন। এক ওভারের জন্য অধিনায়কত্ব, কিপিং, দুটিই করলেন তাই বিরাট কোহলি। হাতে গ্লাভস, উমেশ যাদবের বলে প্যাডও পড়লেন না ভারতের টেস্ট অধিনায়ক।

     

    আউট...নট আউট!

     

    ভারতীয় ইনিংসের দশম ওভারের দ্বিতীয় বল। মাশরাফির ঢুকতে থাকা বলে ইনসাইড-এজ হলো ধাওয়ানের। ডানপাশে ঝাঁপিয়ে ধরলেন মুশফিক। মাশরাফির আবেদনে সাড়া দিলেন আম্পায়ার রডনি টাকার। ধাওয়ানও হাঁটা দিলেন। কিন্তু আউট হলেন না ধাওয়ান!


    মুশফিক যে ধরেও ছেড়ে দিয়েছেন ক্যাচ, যা খেয়াল করেননি মাশরাফি বা টাকারের কেউই! বাংলাদেশী ফিল্ডাররা আবার উইকেটও ভেঙ্গে দিয়েছিলেন ধাওয়ানের। বল ডেড হয়ে যাওয়াতে এ আবেদনে অবশ্য সাড়া দেননি আর রড টাকার!

     

    দুই মুশফিক

     

    এর আগেও ধাওয়ানের আরেকটি ক্যাচ ছেড়েছিলেন মুশফিক। কিপিং নিয়ে পুরোনো প্রশ্নটাই নতুন করে ফিরে এলো তখন। তবে হঠাৎ করেই যেন ভোল পালটে নতুন মুশফিক হাজির হলেন দৃশ্যপটে। একে একে ধরলেন পাঁচটি ক্যাচ। বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের খালেদ মাসুদের রেকর্ডে ভাগ বসালেন মুশফিক। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে তিনটি ক্যাচের সঙ্গে দুটি স্ট্যাম্পিং করেছিলেন মাসুদ।

     

    মুশফিক কি পারলেন তাঁর উইকেটকিপিং নিয়ে ওঠা দীর্ঘকালের প্রশ্নটা দাবিয়ে দিতে?

     

    উদযাপন...

     

    মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে আউট করে কিছুটা ‘স্বভাববিরুদ্ধ’ ভাবেই বুনো উল্লাসে ফেটে পড়লেন সাকিব। আর ম্যাচশেষে এলো মাশরাফি আর তাসকিনের সেই ‘ট্রেডমার্ক’ উদযাপন, বুকে বুক মিলিয়ে। উদযাপনের বিচিত্রতার তালিকাটা আরেকটু লম্বা হলো কাল, মাশরাফি তাসকিনের এবারের ভঙ্গিটা ‘কোমরে কোমর’ মেলানোর। পরে রুবেলের সঙ্গে কোমর নাচালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, তাও বিচিত্র কায়দায়। এর আগে মুস্তাফিজ পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর নাসির রীতিমত পিঠে চড়ে বসেছিলেন তাঁর। আর ম্যাচশেষে মাশরাফি অভিষিক্ত পেসারের কপালে আঁকলেন স্নেহের চিহ্ন!

     

    ভারতের সঙ্গে জয়ে আসলে তো মাশরাফিদের মতোই উদযাপনে ভাসছে গোটা দেশ!