• বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ ২০১৫
  • " />

     

    বৃষ্টিরাজত্বে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

    বৃষ্টিরাজত্বে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি    

    ক্রিকেটের মত ‘কন্ডিশন-নির্ভর’ খেলা বোধহয় খুব বেশী নেই। মেঘ, বৃষ্টি, রোদ, ঠান্ডা, গরম, পিচের অবস্থা, আউটফিল্ড কতকিছু নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় যে কোনো সময়।

    বৃষ্টি সবচেয়ে বড় বাধা ক্রিকেটে। বৃষ্টি খেলার গতিপথ যেভাবে বদলে দেয়, ইতিহাসের জন্ম হয় রীতিমত। তবে বৃষ্টির ওপর কারও হাত নেই, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাই। ফতুল্লা টেস্টেই যেমন হলো।

     

     

    এদেশে ক্রিকেটের মৌসুম নয় এই সময়টা। অনেক প্রতীক্ষার বৃষ্টিতে যখন সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন, ফতুল্লায় ক্রিকেট তখন হাহাকার করেছে শুধু! পাঁচদিনে গড়ে খেলা হলো মাত্র ৩৬ ওভার করে! বিসিবিকে দুষছেন হয়তো অনেকেই। বিসিসিআইকেও। তবে বাস্তবতা হলো, এ ছাড়া উপায় নেই। গত পাঁচ বছরে কোন টেস্ট হয়নি দুদলের নিজেদের; বলা ভাল, ভারত খেলেনি বাংলাদেশের সঙ্গে। অনেক দরকষাকষির পর এই টেস্ট বা সিরিজ। আইপিএলের পর এ সময়েই ‘ব্যস্ত’ ভারতের সূচী একটু হালকা। ঘোর বর্ষাতেই তাই বাংলাদেশ আগমন, এরপর তারা যাবে জিম্বাবুয়ে।

    ক্রিকেটে ‘সাম্যাবস্থা’ নেই। ছোট-বড়র ব্যবধান এখানে চোখে পড়ার মতো। ছোটরা তাই চেয়ে থাকে, এটা-ওটা-সেটা দিয়ে যদি একটা সিরিজ খেলা যায়! বাস্তবতাই এমন, এসব নিয়ে ‘মায়াকান্না’ করেও লাভ নেই তাই। তারচেয়ে এই পাঁচ দিনে প্রায় ১৮৪ ওভারের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে হিসাব কষাই ভাল!

    দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নটা দিন দিন বড় হচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটই আসল, সর্বোচ্চ পরীক্ষার জায়গা, এসব কথা ক্লিশে প্রায়। তবে টেস্টে পরীক্ষিতদের বিকল্প নেই, ‘স্পেশালিস্ট’ বলে যাদের। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির আগে ভারত এ ক'দিনে কী শিক্ষা দিয়ে গেল, চোখ বোলানো যায় সেদিকেই।

    পাঁচ ব্যাটসম্যান, উইকেটকিপার, পাঁচজন বোলার। ভারতের একাদশে স্পেশালিস্ট অলরাউন্ডারের প্রয়োজন পড়েনি তাই। শিখর ধাওয়ান আর মুরালি বিজয় শুরু থেকেই দেখিয়েছেন, মরা পিচের সুবিধা নিতে হয় কীভাবে। টপ অর্ডারের সাফল্যে তাই ঢেকে গেছে মিডল অর্ডারে বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার ব্যর্থতা। আর পরে আজিঙ্কা রাহানের ঝড়ো ইনিংস, ফতুল্লার ব্যাটিং উইকেটে ভারত ব্যাট করেছে বুঝেশুনেই। ৪.৪৬ রানরেট, বৃষ্টি বাগড়া না বাধালে ভারত আরও ফায়দা তুলতো নিশ্চিতই।

     

     

    পাঁচ বোলারের অন্যতম সুবিধা হলো, কোনো এক বোলারের দিনটা খুব খারাপ গেলেও বাকিরা পুষিয়ে নিতে পারেন। প্রথম ইনিংসে উমেশ যাদবের খারাপ দিনটা যেমন পুষিয়ে দিয়েছেন রবি অশ্বিনরা। উইকেটে একটু টার্ন মিলেছে, আশ্বিনের জন্য বাউন্সও ছিল। টসড আপ করিয়েছেন, ফ্লাইটের ব্যবহার করেছেন ভালভাবেই। ফল, ২৫ ম্যাচে দশমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেলেন এই অফস্পিনার। শিখর ধাওয়ানও পেয়েছেন আট ইনিংস পরে ফিফটি পেরোনো ইনিংসের দেখা (আসলে সেঞ্চুরি করেছেন, শেষ করেছিলেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে, অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। এর মাঝে কোনো ফিফটিও ছিল না)। ধাওয়ান-বিজয়ের সেঞ্চুরি, রাহানের ইনিংস, অশ্বিনের পাঁচ উইকেট, ব্যক্তিগত সাফল্যে ভারতীয়দের অর্জন ভালই। তবে র‍্যাঙ্কিংয়ের নয় নম্বর দলের সঙ্গে ড্র করে ভারত আইসিসির র‍্যাঙ্কিংয়ে তিন থেকে একধাপ নেমে গেছে।

     

     

    র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হয়নি বাংলাদেশের। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচেও ফলো-অনে পড়তে হয়েছে। প্রায় আটজন ব্যাটসম্যান নিয়েও ফলো-অনে পড়া, ভাবিয়ে তোলা উচিৎ সংশ্লিষ্ট সকলকেই। পেসার দরকার, আরও বেশী করে দরকার স্কোয়াডে একটা স্থিতিবস্থা আনা! প্রাপ্তির হিসাব করতে তাই ফতুল্লা টেস্টকে রাখতে হবে আতশী কাঁচের নীচে।

    হয়তো তখন অর্জন হিসেবে নিতে হবে তিনটি ঘটনা। সাকিবের বোলিং, জুবাইরের ঝলক আর লিটনের ব্যাটিং।

    শেষ পাঁচ ইনিংসে তিন উইকেট ছিল সাকিবের, সেই ঐতিহাসিক খুলনা টেস্টের পর (দশ উইকেট ও সেঞ্চুরি) বোলিংটা সাকিবসুলভ হচ্ছিল না যেন। ফতুল্লায় এসে চার উইকেট পেলেন, স্বভাববিরুদ্ধ ৪.২৮ ইকোনমি রেটে। ক্যারিয়ারজুড়ে সাকিবের ইকোনমি রেট যে ২.৯৯।

     

     

    পাকিস্তান সিরিজ থেকেই জুবাইরকে নিয়ে হাহাকার চলছিল। কেন তিনি স্কোয়াডের বাইরে, সদুত্তর মেলেনি। ফতুল্লায় এক ইনিংস বোলিংয়ের সুযোগ পেলেন, দুটি উইকেট আসলে বোঝাতে পারবে না জুবাইরের বোলিং নিয়ে রোমান্টিসিজমে ভেসে যাওয়ার কারণ! দুটি উইকেটই নিয়েছেন গুগলিতে, বিরাট কোহলি আর ঋদ্ধিমান সাহা বোকা বনেছেন রীতিমত। লেগ-স্পিন নামক শিল্পে গুগলি সবসময়ই বাড়তি একটু স্বাদ জোগায়। সাকিবের মুখে সেদিন জুবাইরকে নিয়ে উচ্চাশাও ফুটেছে অনেক। তবে এদেশের ক্রিকেট রহস্যময়, জুবাইরের মতো খেলোয়াড়রাও হারিয়ে যান তাই। জুবাইরকে নিয়ে এমন আফসোস করতে যেন না হয়!

    আফসোস করতে না হোক লিটনকে নিয়েও। লিটনের ব্যাটিংয়ে একটা চোখজুড়ানো ভাব আছে। এক ছয় আর আট চারে ৪৫ বলে ৪৪, লিটনের ব্যাট এমন করে হাসির ঝিলিক দিলেই চলবে। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটনের টিকে থাকা দরকার, তাঁর জন্য, মুশফিকের জন্যও।

    বৃষ্টি-রাজত্বের ফতুল্লা টেস্টের প্রাপ্তির খেরোখাতায় খুব বেশী ট্যালি যে নেই যোগ করার মতো!