• বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ ২০১৫
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : মুস্তাফিজে চড়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পথে

    ২২ গজের সেলুলয়েড : মুস্তাফিজে চড়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পথে    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে! 

     

     

    ম্যাজিক মুস্তাফিজ!

     

    জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, আনিসুর রহমান, মোর্শেদ আলী খান, গোলাম নওশের, মঞ্জুরুল ইসলাম, সৈয়দ রাসেলের উত্তরসূরী হয়ে ওয়ানডে খেলতে এসেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি আরও একজন পেসার খেলেছেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ, বিকাশ রঞ্জন দাস (মাহমুদুর রহমান) খেলেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচে। বাঁহাতি পেসারদের সর্বোচ্চ উইকেটে মুস্তাফিজুরের ওপরে আছেন এখন শুধু মঞ্জুরুল ইসলাম (২৪টি) ও সৈয়দ রাসেল (৬৪টি)। বাংলাদেশ নাকি বাঁহাতি স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য, মুস্তাফিজুর কি দেখাবেন নতুন পথ?

     

    ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন আর্ম

     

    শূন্য রানেই রোহিত শর্মা ফিরে যাওয়ার পর কোহলি ও ধাওয়ানের জুটিটা জমতে শুরু করেছে তখন। বোলিংয়ে নাসির হোসেনকে আনলেন মাশরাফি মর্তুজা। নাসিরের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বল, টার্ন করবে ভেবে ব্যাকফুটে গিয়ে খেললেন কোহলি। বল টার্ন তো করলোই না, উলটো স্কিড করে নীচু হয়ে আঘাত হানলো কোহলির প্যাডে! একেবারে ‘প্লাম্ব এলবিডব্লিউ’। কোহলি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, জায়গায় দাঁড়িয়েও থাকলেন কিছুক্ষণ!

     

    নাসির পরে ফিরিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার ধাওয়ানকেও। ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি, তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলকে ঠিকই ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন নাসির।

     

    কোহলির কলিকাল

     

    তাসকিন আহমেদ দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলটি করলেন নো। পরের বল ফ্রি হিট। অফস্ট্যাম্পের বাইরে শর্ট লেংথের বলে কোহলি কিনা খেললেন রক্ষণাত্মক শট!


    নাসিরের বলে আউট হয়েও ফিরে যাওয়ার কথা ভুলতে বসেছিলেন কোহলি। ওয়ানডেতে শেষ কবে ফিফটি পেয়েছিলেন, তা মনে আছে তো! এ নিয়ে টানা নয় ইনিংস কোন ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস নেই ভারতীয় টেস্ট অধিনায়কের (দুটিতে অপরাজিত ছিলেন অবশ্য)। শেষ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে অ্যাডিলেডে করেছিলেন সেঞ্চুরি।

     

    ফ্রি হিটে ‘হিট’ করতে ভুলে গেছেন কোহলি; হাসছে না কোহলির ব্যাট, হাসছে না ভারতও!

     

    সমানে সমান

     

    বৃষ্টি বাধায় ম্যাচ নেমে এল ৪৭ ওভারে। ভারত ৪৫ ওভারে করতে পারলো ২০০ রান। বাংলাদেশের লক্ষ্যও দাঁড়ালো সেই ২০০ রানই! কারণ?

     

    বৃষ্টি নামার আগেই ভারত হারিয়ে ফেলেছিল আট উইকেট, ৪৩.৫ ওভারে। ওভার কমে যাওয়াতে ভারত ব্যাটিংয়ের কিছু ‘সুযোগ’ হারিয়েছিল, তবে আট উইকেট খোয়ানোতে ডাকওয়ার্থ-লুইস সাহেবের নিয়মে সে সুযোগের সুবিধা ভারতকে দেওয়া হয়েছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। পঞ্চাশ ওভার খেলা না হওয়ায় বাংলাদেশ যে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সেটি ভারতের হারানো সুযোগের থেকে সামান্য বেশী। বাংলাদেশের সামনেও তাই লক্ষ্য ছিল ভারতের করা রানের সমানই, ওই ২০০ রান।

     

    আবার ভারত যদি বৃষ্টি নামার আগে আট উইকেটের জায়গায় পাঁচ উইকেট হারাতো, বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়াতো ২১৪। ডি-এল পদ্ধতি অনুযায়ী, দুই উইকেট হাতে রেখে তিন ওভারে রান তোলার চেয়ে পাঁচ উইকেট হাতে রেখে তোলার বেশী ‘সামর্থ্য’ থাকে কোনো দলের।

     

    ‘সফট’ আম্পায়ার, ‘হার্ড’ আম্পায়ার

     

    ধাওয়াল কুলকার্নির বলে তামিম ‘ক্যাচ’ দিলেন কোহলিকে। অন্তত কোহলি ও ভারতীয় ফিল্ডাররা তাই ভাবলেন! ভাবলেন না আম্পায়ার শরাফুদ্দৌলা। টিভি আম্পায়ারের কাছে গেলেন। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন সবসময়েই মাঠের আম্পায়ারদের সহায়তা করতে, ব্যতিক্রম হলো না এবারও। মাঠ থেকেই একটা সিগন্যাল দেন আম্পায়াররা, তিনি কী ভাবেন জানিয়ে দেন সেটি। শরাফুদ্দৌলাও দিলেন। টিভি আম্পায়ার ক্যাচ প্রমাণের মতো ‘যথেষ্ট’ ফুটেজ পেলেন না। শরাফুদ্দৌলার ‘সফট’ সিদ্ধান্তই তাই বহাল থাকলো, কোহলি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না!

     

    তবে রড টাকার কিছুটা ‘হার্ড’ই হয়েছিলেন যেন। বাংলাদেশ ইনিংসের ৩২তম ওভার। সাকিবের চোখে কিছু একটা হয়েছে, ড্রেসিং রুমের দিকে সাহায্য চেয়ে পাঠিয়েছেন। সাকিবে এগোচ্ছেন সেদিকে, বাগড়া বাধালেন আম্পায়ার রড টাকার। সাকিব দেরী করছেন, টাকারের ভাবভঙ্গী বলছিল এমনই। সাকিবও বুঝিয়ে দিতে চাইছিলেন, তাঁর দেরী করার কারণ যথেষ্টই ‘আসল’, ইচ্ছে করে দেরী করারও কারণ নেই তাঁর!

     

    সাব্বিরের জবাব

     

    আগের ওভারেই কুলকার্নি ও মিড-অফের মাঝ দিয়ে অসাধারণ এক চার মেরেছেন, মারার পর বলের দিকে তাকাননিও একবার। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলটি ছিল বুকসমান বাউন্স, ডিফেন্ড করতে গিয়ে তাল হারিয়ে ফেললেন সাব্বির। পড়লেন স্ট্যাম্পের ঠিক পাশেই। হিট উইকেট হতে গিয়েও বেঁচে গেলেন। পরের বলটি যেন আগে থেকেই জানতেন সাব্বির, শর্ট লেংথে করবেন কুলকার্নি। সামনের পা সরিয়ে রাখলেন আগেই, কুলকার্নিও করলেন শর্ট। মিড-অন আর মিডউইকেটের মাঝ দিয়ে ‘বুম’! চার। মোক্ষম জবাব যাঁকে বলে!

     

    চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পথে

     

    প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয়েছিল বাংলাদেশেই। ১৯৯৮ সালের সেই টুর্নামেন্টের নাম ছিল অবশ্য আইসিসি নকআউট ট্রফি বা আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল কাপ। এ নিয়ে সাতবার হয়েছে এ টুর্নামেন্ট, তবে মূলপর্বে খেলা হয়নি বাংলাদেশের কখনো। ২০১৭ সালের জুন মাসে শেষবারের মতো ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে হবে এ টুর্নামেন্ট। কাল ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ সরাসরি পেয়ে গেল সেই টুর্নামেন্টেরই টিকেট!